মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজারে অবস্থিত নবনির্মিত স্মৃতিসৌধটি যেন গাড়ি স্ট্যান্ড ও ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। স্মৃতিসৌধের সামনে বাজারের ময়লা ফেলা হয়, সামনে ও আশপাশের এলাকা ট্রাক, বেবিটেক্সি, সিএনজি, অটোরিকশা স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেখে বোঝা যাবে না যে, এটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ২১ জন শহীদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধ। সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের উপরে ময়লার স্তূপ, মাঝখান গর্ত হয়ে গেছে, সামনে ভেঙে গেছে, উভয় পাশে ট্রাক এবং বেবি টেক্সি, সিএনজি অটোরিকশার গ্যারেজ ও স্ট্যান্ড হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এলাকার অনেকেই জানান এ অবস্থাটি দীর্ঘদিনের। অটোরিকশা স্ট্যান্ডের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ম্যানেজারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের গাড়ি রাখার জায়গা না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এখানে রাখছি। দেয়াল করে জায়গাটি রক্ষণাবেক্ষণ করলে আমরা আর এখানে গাড়ি রাখতে পারবো না।
এলাকার প্রবীণ বাম সংগঠক কমরেড আবদুল মালিক জানান, এই স্মৃতিসৌধটির জায়গায় ২১ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। এখানে গুলি করে হত্যা করা হয় বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুুল গফুরের পিতা, চাচা, বোনের জামাই এবং চাচাতো ভাইকে। এরা হলেন- কলির কোনা গ্রামের আইনউদ্দিন, মখরম উদ্দিন, আব্দুস ছত্তার এবং মখছন্দ আলী, রাউৎগাঁও ইউপি’র মনরাজ গ্রামের ছমর মুন্সী এবং ক্ষিতু দাস, রাউৎ গ্রামের অক্ষয় কুমার চৌধুরী, তিলাশি জুরা গ্রামের প্রবীর চন্দ্র ধর, পৃথিমপাশা গ্রামের কুনুর উদ্দিন, সদপাশা গ্রামের ডা. কুমুদ রঞ্জন দেব, রাজনগর গ্রামের প্রহল্লাদ রঞ্জন দেব, প্রমোদ রঞ্জন দেব, আলী নগর গ্রামের রেখান উদ্দিন, আব্দুল আলী, সাবাজ আলী, আবদুল আলী, কুলাউড়ার জয়পাশার আছলিম উদ্দিন, পৃথিমপাশা ইউপি’র কানিকিয়ারীর রব উল্ল্যা, রাউৎগাঁও ইউপি’র মনরাজের আব্দুর রহমান (ছমর মুন্সী), মো. বসির মিয়া, কর্মধা ইউপি’র ট্রাট্রিউলী গ্রামের মকবুল উদ্দিন, দীঘলকান্দির নমই উল্লাসহ অজ্ঞাত একজন। পৃথিমপাশা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, অতন্তপক্ষে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে। এখানে আমার পরিবারের চারজন সদস্যের সমাধি রয়েছে । কিন্তু তা রক্ষা করা যেন দুরূহ হয়ে উঠেছে, অনেক প্রতিবাদ করেছি কেউ তা শোনে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে একদিনের মধ্যেই স্মৃতিসৌধটি রক্ষিত হবে বলেও তিনি আশাবাদী। প্রবীণ বাম নেতা কমরেড আবদুল মালিক বলেন শুধু মার্চ ও ডিসেম্বর মাস এলেই শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করি এ সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনিও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান কমরেড আবদুল লতিফের কাছে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্মৃতিসৌধটি রক্ষার জন্য আমরা শিগগির বসে একটি সিন্ধান্ত নেব। স্মৃতিসৌধ রক্ষার ব্যপারে জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নয়। কেউ আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
আলাউদ্দিন কবির, কুলাউড়া থেকে | ২৯ মার্চ ২০১৫, রবিবার
http://www.mzamin.com/details.php?mzamin=Njk1MjU=
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস